ঘরের কর্মজীবি নারীকে সহযোগিতা করুন

প্রকাশঃ এপ্রিল ১৮, ২০১৬ সময়ঃ ২:৫৯ অপরাহ্ণ.. সর্বশেষ সম্পাদনাঃ ২:৫৯ অপরাহ্ণ

প্রতিক্ষণ ডেস্কঃ

women-winter-care

শেষ পর্যন্ত চাকরিটা ছেড়েই দিতে হলো আফসানাকে। একটা বেসরকারি ফার্মে বেশ ভালো বেতনে, ভালো পদে চাকরি করতেন তিনি। বিয়ের সময় পাত্রপক্ষ বলেছিল পাত্রীর চাকরি করা নিয়ে কোন আপত্তি নেই, এমনকি কথাও দিয়েছিল এই বলে, কর্মজীবি আফসানাকে তার নতুন পরিবার থেকে সকল প্রকার সাহায্য করা হবে চাকরি চালিয়ে যেতে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এত সব প্রতিশ্রুতির কিছুই বাস্তবায়িত হলো না। বিয়ের মাত্র ৬ মাসের মাথায় চাকরি ছেড়ে দিতে হলো আফসানাকে।

এ শুধু আফসানার গল্প নয়। বাংলাদেশের পিতৃতান্ত্রিক সমাজব্যবস্থায় শত শত নারীর গল্প এটি। বিয়ের পর চাকরিটি ছেড়ে দেওয়াই যেন নারীর নিয়তি এই সমাজে। নারীর ক্যারিয়ার, নারীর সম্ভাবনা, নারীর সামর্থ্য সব কিছু তার পথ হারিয়ে ফেলে পিতৃতান্ত্রিকতার নিগড়ে।

ফিরে আসি আফসানার গল্পে। কেন তাকে এত ভালো চাকরিটি ছেড়ে দিতে হলো?

আফসানার সঙ্গে কথোপকথনে জানা যায়, স্বামী, শ্বশুড়-শ্বাশুড়ি, ভাসুর-ভাসুর বউ ও ননদের যৌথ পরিবারে বিয়ে হয় তার। সংসারে ছিল হাজারো কাজের চাপ। বেসরকারি অফিসের কাজ সামলে সংসারের কাজ ঠিকমতো করতে পারতেন না তিনি। আর এক্ষেত্রে স্বামী বা শ্বশুড়বাড়ির অন্য কারো সাহায্য তো পানইনি বরং উঠতে বসতে নানা রকম খোঁটা শুনতে হত। এমন মানসিক নির্যাতন সহ্য করতে না পেরেই চাকরি ছেড়ে দিতে বাধ্য হন আফসানা। আর সেই সাথে মিথ্যে হয়ে যায় শিক্ষার পেছনে তার সারা জীবনের পরিশ্রম, তার বিশ্ববিদ্যালয়ের বড় ডিগ্রি, তার স্বপ্ন ও উচ্চাকাঙ্ক্ষা। একই সাথে অপচয় হয় তাকে গড়ে তুলতে তার বাবা-মায়ের দীর্ঘদিনের সাধনার, অপচয় হয় তার সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সিটের পেছনে ব্যয়কৃত জনগণের অর্থের।

অর্থ্যাৎ একজন নারীকে তার চাকরি থেকে ছাড়িয়ে দেওয়া শুধুই একজন কর্মজীবি নারীর গৃহিনীতে রূপান্তরিত হওয়ার মধ্যে সীমাবদ্ধ নয় বরং এটি তার ও তার জীবনের পারিপার্শ্বিক অনেক কিছুর ধ্বংস হয়ে যাওয়া।

একজন কর্মজীবি নারী কি সংসারের দাবির মুখে নিজের প্রিয় চাকরিটির বিসর্জন দিয়ে সুখী হতে পারেন? এক কথায় উত্তর দেওয়া যায়, পারেন না। তিনি নিজের স্বামী ও শ্বশুড়বাড়ির লোকদের উপর শ্রদ্ধা হারিয়ে ফেলেন, নিজের প্রতি আত্নবিশ্বাস হারিয়ে ফেলেন, এমনকি কখনো কখনো সন্তানদেরকেও নিজের সাফল্যের শত্রু ভাবতে থাকেন। আর ক্যারিয়ার জলাঞ্জলি দেওয়ার চাপা দুঃখ যে তাকে আমৃত্যু কুড়ে কুড়ে খায় তা বলাই বাহুল্য। মনোবিজ্ঞানীরা জানান, সংসারের জন্য ক্যারিয়ার বিসর্জন দেওয়া নারীদের এক পর্যায়ে নানা রকম মানসিক সমস্যা দেখা দেয়। অবদমিত আকাঙ্ক্ষার চাপে তাদের মধ্যে বিষন্নতা, হতাশা, অনিদ্রা, স্ট্রেস প্রভৃতি সমস্যা দেখা দেয়। এছাড়া নানা রকম শারীরিক সমস্যা যেমন হৃদরোগ, উচ্চ রক্তচাপ, হিস্টিরিয়া প্রভৃতিতেও তারা আক্রান্ত হয়।

আরেকটি বিষয় না উল্লেখ করলেই নয় যে, আফসানার ক্ষেত্রে কেবল মানসিক নির্যাতন করা হলেও বিবাহিত নারীর উপর নানান উপায়ে নির্যাতন করা হয় শুধু তাকে চাকরির স্বাধীনতা থেকে বঞ্চিত করার জন্য। অনেক পরিবারে তাদের বউকে তার অনিচ্ছা সত্ত্বেও সন্তান ধারণে বাধ্য করা হয় চাকরি ইস্তফা দিতে বাধ্য করার জন্য। আবার অনেক পরিবারে নারীকে চাকরি করতে না দেওয়ার জন্য শারীরিকভাবেও নির্যাতন করা হয়। বলাই বাহুল্য এই শারীরিক নির্যাতন নারী ও তার জীবনের ওপর ফেলে অপরিসীম ক্ষতিকর প্রভাব। কখনো কখনো এই নির্যাতন নারীর গর্ভপাত পর্যন্ত ঘটিয়ে দেয়, এমনকি নারীর হত্যা পর্যন্ত এই নির্যাতন গড়িয়ে যায়।

তাই আপনি যদি হয়ে থাকেন পাত্র বা পাত্রের পরিবারের কোন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি, তবে দয়া করে ঘরের বউটিকে চাকরি ছাড়তে মানসিক, শারীরিক বা কৌশলগতভাবে নির্যাতন করার আগে এর ক্ষতিকর প্রভাবের কথা একবার ভেবে দেখুন। ভেবে দেখুন যে, বিষয়টি আপনার একান্ত পারিবারিক ব্যাপারই নয় বরং এর সঙ্গে বৃহত্তর সমাজের স্বার্থও জড়িত। এটাও মনে রাখবেন, কারো ব্যক্তিগত স্বপ্ন, আকাঙ্ক্ষা ধ্যুলিস্যাৎ করা কোন সভ্য সমাজের মানুষের কর্ম হতে পারে না।

 

প্রতিক্ষণ/এডি/সাদিয়া

আরো সংবাদঃ

মন্তব্য করুনঃ

পাঠকের মন্তব্য

20G